বিভিন্ন ধরণের মৃত্তিকার শ্রেণীবিভাগ

মৃত্তিকার শ্রেণীবিভাগ থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলি দেওয়া হল

1. ডকুচেভ প্রদত্ত মৃত্তিকার শ্রেণীবিভাগটি আলোচনা করুণ।

উঃ রুশ মৃত্তিকা বিজ্ঞানী ভি. ভি. ডকুচেভ সর্বপ্রথম মৃত্তিকাকে উৎপত্তি ও জলবায়ু অনুসারে শ্রেণিবিভাগ করেন। 1879 সালে মৃত্তিকা শ্রেণিবিভাগ সম্বলিত একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। পরবর্তীকালে 1900 সালে তিনি আবার একটি সংশোধিত গবেষণা পত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করেন। তিনি মৃত্তিকাকে প্রধান তিনটি বিভাগে বিভক্ত করেন। যথা- (i) স্বাভাবিক মৃত্তিকা (Normal Soil)- স্বাভাবিক বা আঞ্চলিক মৃত্তিকা বলতে তিনি বুঝিয়েছেন, যে সকল মাটি জলবায়ু ও স্বাভাবিক উদ্ভিদের প্রভাবে সৃষ্টি হয়। যেমন- পডসল মৃত্তিকা, চারনোজেম মৃত্তিকা, ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা, চেস্টনাট মৃত্তিকা, তুন্দ্রা মৃত্তিকা প্রভৃতি। (ii) পরিবর্তনশীল মৃত্তিকা (Transitional Soil)- পরিবর্তনশীল বা অন্তঃআঞ্চলিক মৃত্তিকা হল সেই সকল মাটি যা মূল স্বাভাবিক মৃত্তিকা অঞ্চলের মধ্যেই স্থানীয় প্রভাবকের প্রভাবে সৃষ্টি হয়। যেমন- পিট, মেডো মৃত্তিকা প্রভৃতি। (iii) অস্বাভাবিক মৃত্তিকা (Abnormal Soil)- অস্বাভাবিক বা অনাঞ্চলিক মৃত্তিকা বলতে বোঝায় যার সাধারণ স্থানীয় মৃত্তিকার সাথে মিল থাকেনা। এরূপ মৃত্তিকা বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে স্থানান্তরিত প্রক্রিয়ার ফলে সৃষ্টি হয়। যেমন- পলল মৃত্তিকা, লোয়েস মৃত্তিকা প্রভৃতি।

2. এন. এম. সিবার্টজেটের মৃত্তিকার শ্রেণিবিভাগটি লিখুন।

উঃ ডকুচেভের সুযোগ্য ছাত্র এন. এম. সিবার্টজেট তাঁর পথ ধরেই জলবায়ু, স্বাভাবিক উদ্ভিদ ও মাটির স্তরবিন্যাসের সাপেক্ষে মৃত্তিকাকে তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করেন। যথা- (i) স্থানীয় বা আঞ্চলিক মৃত্তিকা (Zonal Soil)- ল্যাটেরাই মৃত্তিকা, চারনোজেম মৃত্তিকা, তুন্দ্রা মৃত্তিকা, ধূসর বনভূমির মাটি, পডজল মৃত্তিকা, শুষ্ক স্টেপ জাতীয় মৃত্তিকা প্রভৃতি।(ii) অন্তঃ আঞ্চলিক মৃত্তিকা (Intra-zonal soil)- জৈব কার্বন যুক্ত জলাভূমির মৃত্তিকা, গৌণ ক্ষারকীয় মৃত্তিকা, সোলেনেৎজ জাতীয় মৃত্তিকা প্রভৃতি। (iii) অনাঞ্চলিক মৃত্তিকা (Azonal Soil)- নদী বাহিত পলল মৃত্তিকা, বায়ু বাহিত লোয়েশ মৃত্তিকা, স্কেলিটাল বা পাথুরে মৃত্তিকা প্রভৃতি।

3. ডি. জি. ভিলেনেস্কি-র মৃত্তিকার বিভাজনটি আলোচনা করুণ।

উঃ ডি. জি. ভিলেনেস্কি 1927 সালে উষ্ণতা, আর্দ্রতা ও উদ্ভিদের ওপর ভিত্তি করে মৃত্তিকাকে প্রধান চারটি ভাগে ভাগ করেছেন। যথা- (i) থার্মোজেনিক মৃত্তিকা বা উষ্ণ অঞ্চলের মৃত্তিকা (Thermogenic Soil)- এই মৃত্তিকা প্রধানত নিরক্ষীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলের উষ্ণ অঞ্চলে। আবহবিকারের প্রভাবে শিলা জারিত হয়ে সৃষ্টি হয়। উদাহরণ- ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা। (ii) ফাইটোজেনিক বা উদ্ভিদের প্রভাবে সৃষ্ট মাটি (Phytogenic Soil)- আর্দ্র নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ও উষ্ণতার পরিমান কম থাকায় সরলবর্গীয় বনভূমি ও স্তেপ তৃনভূমি থেকে সৃষ্টি মৃত্তিকাকে ফাইটোজেনিক মৃত্তিকা বলা হয়। উদাহরণ- চারনোজেম, পডজল, চেষ্টনাট প্রভৃতি। (iii) হাইড্রোজেনিক বা আর্দ্র জলাভূমি অঞ্চলের মাটি (Hydrogenic Soil)- শীতল ও আর্দ্র পরিবেশে বিশেষত জলাভূমি অঞ্চলে মৃত্তিকার গঠন সম্পূর্ণ হয়না। এই সমস্ত অঞ্চলে অবায়ুজীবী জীবাণু দ্বারা জৈব পদার্থ আংশিক বিয়োজিত কালো বা ধূসর রঙের এক ধরণের মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়। একে হাইড্রোজেনিক মৃত্তিকা বলা হয়। উদাহরণ- পিট মৃত্তিকা, মিডো মৃত্তিকা, বগ মৃত্তিকা প্রভৃতি। (iv) হ্যালোজেনিক বা লবণের প্রভাবে সৃষ্টি মাটি (Hallogenic Soil)- মরু বা মরু প্রায় অঞ্চল ও সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলে ধৌত প্রক্রিয়া কম এবং বাষ্পীভবন বেশি হয়। ফলে ভূমির উপরিস্তরে সোডিয়াম জাতীয় লবণের আধিক্যের ফলে যে মৃত্তিকা সৃষ্টি হয় তাকে হ্যালোজেনিক মৃত্তিকা বলে। উদাহরণ- সোলানচক মৃত্তিকা, ক্ষারকীয় মৃত্তিকা, সোলোটি বা লবণাক্ত মাটি প্রভৃতি।

4. ডি. জি. ভিলেনেস্কি-র সংশোধিত দ্বিতীয় মৃত্তিকার বিভাজনটি আলোচনা করুণ।

উঃ ভিলেনেস্কি পরবর্তী সময়ে আরও একটি শ্রেণিবিভাগ করেন। তিনি বিভিন্ন অক্ষাংশিয় জলবায়ু অঞ্চলে উষ্ণতা ও আর্দ্রতার পার্থক্যের সাপেক্ষে মৃত্তিকার নানা পরিবর্তন গুলিকে ভিত্তি করে মৃত্তিকাকে পুনরায় পাঁচটি ভাগে ভাগ করেছেন। যথা- (i) মেরুদেশীয় জলবায়ু অঞ্চলের মৃত্তিকা- পিট ও মিডো মৃত্তিকা। (ii) তুন্দ্রা অঞ্চলের মৃত্তিকা- শুষ্ক পিট মৃত্তিকা, কালো মিডো মাটি, অবক্ষয়িত মিডো মাটি। (iii) নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলের মৃত্তিকা- ধূসর মাটি, চেস্টনাট মাটি, সারনোজেম মাটি। (iv) উপক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলের মৃত্তিকা- শুষ্ক তৃণভূমি অঞ্চলের মাটি, হলুদ মাটি। (v) ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলের মৃত্তিকা- মরুপ্রায় অঞ্চলের লাল মাটি, ল্যাটেরাইট মাটি, অবক্ষয়িত লাল মাটি।

5. ই. রামান প্রদত্ত মৃত্তিকার শ্রেণীবিভাগটি আলোচনা করুণ।

উঃ ই. রামান জলবায়ুগত পার্থক্যের উপর ভিত্তি করে মৃত্তিকার শ্রেণিবিভাগ করেন। তিনি সুমেরু অঞ্চলের মাটিকে তুন্দ্রা শ্রেণীতে এবং আল্পীয় অঞ্চলের মাটিকে পার্বত্য অঞ্চলের মাটিকে বুঝিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে আর্দ্র ও শুষ্ক অঞ্চলের ভিত্তিতে মাটিকে কয়েকটি উপবিভাগে বিভক্ত করেছেন। যথা- (i) আর্দ্র মাটি- (A) পডজল মাটি, (B) বাদামী মাটি, (C) হলুদ ও লাল মাটি। (ii) শুষ্ক মাটি- (A) সারনোজেম মাটি, (B) ধূসর মরুভূমির মাটি এবং লবণাক্ত ও ক্ষারকীয় মাটি। তাঁর এই শ্রেণিবিভাগে জলাভূমির মাটির জন্য কোন বিভাগ নেই। ল্যাটেরাইট মাটি সৃষ্টি প্রক্রিয়া ল্যাটেরাইজেশন প্রক্রিয়ার কোন উল্লেখ নেই। এছাড়াও তাঁর শ্রেণিবিভাগে পলল মৃত্তিকা সৃষ্টির কোন উল্লেখ নেই।

Leave a Comment