ভূ-বিজ্ঞানী H. R. Cain এর মতে, “ভূ-ত্বক যে সকল উপাদান দ্বারা গঠিত তাদের শিলা বলা হয়”। ভূ-পৃষ্ঠে নুড়ি, কাঁকর, বালি, পলি, কাদা যা কিছুই অবস্থান করে সবই শিলার পর্যায়ে পরে।
বৈশিষ্ট্যঃ i) অধিকাংশ শিলা বিভিন্ন বা একাধিক খনিজের সমন্বয়ে গঠিত বিষমসত্ব যৌগিক হয়। যেমন- গ্রাফাইট, মার্বেল, বেলেপাথর ইত্যাদি ii) আবার, একটি মাত্র খনিজের সমন্বয়ে গঠিত সমসত্ব মৌলিক হতে পারে। যেমন- সৈন্ধিক লবণ। iii) কিছু কিছু শিলার মধ্যে সম্পূর্ণ বা আংশিক জৈবিক পদার্থর অবস্থান রয়েছে। যেমন- চুনাপাথর (ক্যালসিয়াম কার্বনেটের অবস্থান রয়েছে) iv) শিলার কোনো রাসায়নিক সংযুক্তি বা সংকেত নেই। v) উৎপত্তি অনুসারে শিলা তিন প্রকার যথা- ক) আগ্নেয় শিলা- গ্রানাইট, খ) পাললিক শিলা- কংগ্লোমারেট গ) রূপান্তরিত শিলা- মার্বেল।
শিলার শ্রেণীবিভাগ
উৎপত্তি ও বৈশিষ্ট্য অনুসারে শিলাকে সাধারণত তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- i) আগ্নেয় শিলা (Igneous Rock)- গ্রানাইট, ব্যাসাল্ট, তুফ প্রভৃতি। ii) পাললিক শিলা (Sedimentary Rock)- বেলেপাথর, কাদাপাথর, চুনাপাথর, কংগ্লোমারেট প্রভৃতি। iii) রূপান্তরিত শিলা (Metamorphic Rock)- শিস্ট, নাইস, শ্লেট, মার্বেল প্রভৃতি।
আগ্নেয় শিলা (Igneous Rock)
উত্তপ্ত তরল অবস্থা থেকে ম্যাগমা বা লাভা তাপ বিকিরণ করে ভূ-অভ্যন্তরে বা ভূ-পৃষ্ঠে শীতল, কঠিন ও কেলাসিত হয়ে যে শিলার সৃষ্টি হয় তাকে আগ্নেয় শিলা বলে।
বৈশিষ্ট্যঃ i) এই শিলা স্তরহীন কেলাসিত, তাই একে অস্তরীভূত শিলা বলে। ii) এই শিলায় জীবাশ্ম দেখতে পাওয়া যায় না। iii) অন্যান্য শিলা অপেক্ষা এই শিলা কঠিন এবং সহজে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না। iv) এটি ফাটল, দারণ, ছিদ্রহীন অপ্রবেশ্য শিলা। v) এই শিলার দ্বারা গোল বা চ্যাপ্টা ভূমিরূপ গঠিত হয়। vi) শিলাকণাগুলি খুবই ঘণসন্নিবিশিষ্ট ও ভারী। vii) তিন প্রকার শিলার মধ্যে এই শিলা প্রাচীনতম এবং এটিকে সমস্ত শিলার জনক শিলা বলা হয়ে থাকে।
পাতালিক শিলা (Plutonic Rock)
উঃ সংজ্ঞাঃ অতি সান্দ্র ম্যাগমা ভূ-পৃষ্ঠে নির্গত হতে না পেরে ভূ-অভ্যন্তরের অনেক গভীরে কোন ফাটল বা দূর্বল অংশে সূদীর্ঘকাল ধরে অতি ধীরে ধীরে শীতল, কঠিন ও কেলাসিত হয়ে যে আগ্নেয় শিলার সৃষ্টি করে তাকে পাতালিক শিলা বলে।
নামকরণঃ গ্রিক পাতালের দেবতা প্লুটোর (Pluto) নাম অনুসারে এই শিলার নামকরণ করা হয়েছে পাতালিক শিলা (Plutonic Rock)।
বৈশিষ্ট্যঃ i) অতি সান্দ্র ম্যাগমা দ্বারা সৃষ্টি হয়। ii) ভূ-অভ্যন্তরের অনেক গভীরে (প্রায় 10-40 মিটার) কোন ফাটল বা দূর্বল অংশে জমাটবদ্ধ হয়। iii) এই শিলা সূদীর্ঘকাল ধরে অতি ধীরে ধীরে শীতল ও কঠিন হয়। iv) এই শিলার দানাগুলি বৃহত্তর হয়। তাই এদের কেলাসিত শিলাও (Crystalline rock) বলা হয়। v) ঝাড়খন্ডের রাঁচি, হাজারীবাগ অঞ্চলে এই শিলা (গ্রানাইট শিলা) দ্বারা গঠিত গোলাকৃতি ভূমিরূপ দেখা যায়।
রূপান্তরিত শিলা (Metamorphic Rock)
উঃ অর্থঃ গ্রীক শব্দ ‘Metamorphe’ যার অর্থ ‘রূপান্তর’ থেকে ‘রূপান্তরিত’ (Metamorphic) শব্দটি এসেছে।
সংজ্ঞাঃ আগ্নেয় ও পাললিক শিলা অত্যাধিক চাপ, তাপ এবং রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ফলে রূপ, গুণ, গঠন, কাঠিন্য, গ্রথন প্রভৃতির সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়ে নতুন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন এক শিলায় পরিনত হয়, এরূপ পরিবর্তিত এবং রূপান্তরিত শিলাকে রূপান্তরিত শিলা বলে।বৈশিষ্ট্যঃ i) রূপান্তরিত শিলা ভারী ও খনিজগুলি ঘনসন্নিবিষ্ট হয়। ii) এই শিলা স্ফটিক যুক্ত হয়। iii) তাপ ও চাপ এই শিলা রূপান্তরের প্রধান কারণ। iv) পাললিক শিলা রূপান্তরিত হলে খুব কঠিন হয়ে যায়। v) পাললিক শিলা রূপান্তরিত হলে জীবশ্ম দেখা যায় না। vi) এই শিলায় খনিজ সমৃদ্ধ হয়ে থাকে।